সাপ্তাহিক ছুটি একদিন কমানোর ভাবনা সরকারের

করোনা সংকট-উত্তর সময়ে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের লক্ষ্যে বেসরকারি খাত থেকে সরকারি অফিসের ছুটি দুই দিনের পরিবর্তে এক দিনে নামিয়ে আনার দাবি উঠেছে। সরকারও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। তবে ভাবনা এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। একই সঙ্গে আছে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। তবে যদি করোনা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হয় এবং করোনা পরবর্তী মূল্যায়নে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি বর্তমান ধারণার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত ছুটি একদিন কমতেও পারে।যদি সাপ্তাহিক ছুটি একদিনে নামানো হয়, তাহলে কোপ পড়বে শনিবারের উপর। কারণ ধর্মীয় সংবেদনশীলতার জন্য সরকার শুক্রবার ছুটি বাতিল করার ঝুঁকি নিতে চাইবে না। তবে

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অবশ্য দাবি করেছেন, এখনই সাপ্তাহিক ছুটি কমানোর বিষয় নিয়ে ভাবছে না সরকার। করোনার মধ্যেও জরুরি অফিসগুলো খোলা আছে। আর কোনো কাজ তেমন জমেও নেই। ছুটি কমানোর মতো প্রয়োজন এখনো হয়নি। তবে প্রয়োজন হলে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে দেখবে সরকার।

এদিকে বেসরকারি খাতের অনেক উদ্যোক্তা আগামী এক থেকে দুই বছরের জন্য কাজ বা অফিসের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, করোনা পরবর্তী অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে সবাইকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মত করে কাজ না করলে সংকট সামলে উঠা যাবে না।ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখান আহমেদ টিপু এক বিবৃতিতে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি একদিন কমানো এবং সব খাতে কর্মঘণ্টা এক বছরের জন্য এক ঘণ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, দীর্ঘ সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, কল-কারখানা এবং অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। একটা সময় এ সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু করোনাকালে দেশের অর্থনীতির ওপর যে বিশাল ধাক্কা তা সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়বে। কারন, করোনার প্রভাবে সব সেক্টরই চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুল অংকের প্রণোদনার ষোষণা দিয়েছেন, সে সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু সরকারি প্রণোদনা দিয়ে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

ইফাদ গ্রুপ চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি অফিস, কাস্টমস অফিস, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ সপ্তাহে দুইদিন বন্ধ থাকায় বেসরকারি কোম্পানী ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান লেনদেনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ চাহিদা অনুযায়ী শেষ করা যায় না। সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন বহাল থাকলে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনা সমস্যা কেটে গেলে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার এবং কর্মঘন্টা বাড়ানোর দাবী করেছেন ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি

অন্যদিকে প্রাণ-আহসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ রপ্তানির কোয়ারিজ আসছে। অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু শর্ত একটাই দাম কমাতে হবে। এই  দাম কমিয়ে প্রতিযোগিতায় ভাল করতে হলে উৎপাদন দক্ষতা এবং কর্মঘণ্টা বাড়ানোসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।